পৃষ্ঠা: ৮০, প্যাপারব্যাক
সুরা কাহাফ নাজিল হয় আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মদ (স:) এর মদীনায় হিজরতের পূর্বে মক্কায় অবস্থানের শেষ বৎসরে। এই সূরার ছায়ায় ইহুদিবাদের ভন্ড ধর্মীয় ধারণার ঐশ্বরিক উন্মোচন ঘটে। এই সূরায় শেষ জামানায় ইহুদিদের দ্বারা সৃষ্ট সমস্যার প্রতি ইংগিত করা হয়। শেষ জামনায় বিশ্ব প্রত্যক্ষ করবে ভন্ড মসীহ দাজ্জাল এবং ইয়াজুজ মাজুজ এর নৃশংস আক্রমণ যার শিকার হল শুধুমাত্র ইসলাম নয় বরং সমগ্র মানবজাতি। রহমতের নবী আমাদের জন্য এমন কিছু ভবিষ্যৎ ঘটনা প্রকাশ করেন যা আশ্চর্যজনক। যেমন, রিবা। সুদ মানুষের জীবনে এমনতর প্রভাব বিস্তারকারী হবে যে বিশ্বের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী চরম দারিদ্র্যে জীবনাতিপাত করবে। এসময় একজন দরিদ্র ব্যক্তি এ অবস্থায় মোকাবিলা করবে সে নির্দেশনা ব্যক্ত হয়েছে সুরা কাহাফের ৩২-৩৪ আয়াতে।
আখেরী জামানায় ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এতটাই ভয়াবহ হবে যে, ইসলাম অনুসারে জীবনাচরন করা হবে যেন কেউ তার হাতে জ্বলন্ত কয়লা ধারন করেছে। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন মানুষের এমন এক যামানা আসবে যে যামানায় দীনের উপর সুদৃঢ় ব্যক্তির অবস্থা হবে জ্বলন্ত অংগার মুষ্টিতে ধারণকারী ব্যক্তির মত (তিরমিযি, ২২৬৩, ই.ফা)। গুহায় অবস্থানকারী যুবকদের ঘটনা বর্তমান সময় ও সবশেষে ইসলামের বিজয়ের ইংগিতবাহী (আয়াত ১৩-২০)। এই শেষ সময়ের মানুষের মধ্যে প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন হবে ইয়াজুজ-মাজুজ (সহীহ বুখারি হাদিস নং- ৬৫৩০) তবে এই ঈমানহীন দুনিয়ায় সংশ্রব ত্যাগ করাটা সকলের দ্বারা সমালোচিত, নিন্দিত ও প্রত্যাখ্যাত হবে, এমনকি মূর্খ মুসলিম জনতাও এর অংশীদার হবে। মুসলিমদের আত্মসচেতন করারও এই তাফসীরের অন্যতম উদ্দেশ্যে।
শেষ জামানায় আপাত দৃশ্যমান বস্তু এবং বাস্তব বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করায় মানবিক ক্ষমতা দাজ্জাল নষ্ট করে দেবে। হযরত মুহাম্মদ (স.) দাজ্জাল সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, দাজ্জাল হবে এক চোখ বিশিষ্ট। তার সাথে প্রবাহমান দুটি নহর থাকবে। একটি হবে দৃশ্যত সাদা পানি এবং অপরটি দৃশ্যত লেলিহান অগ্নি। যদি কেউ সুযোগ পায় সে যেন ঐ নহরে প্রবশে করে যাকে দৃশ্যত আগুন মনে হবে এবং চক্ষু বন্ধ করে মাথা অবনমিত করে সে যেন তা থেকে পানি পান করে। তা হবে ঠান্ডা পানি। সুতরাং দাজ্জালের তৈরীকৃত বিষয় দৃশ্যত যা বাস্তবে তা নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি শুধুমাত্র বাহ্যিক অবস্থা বিচার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সে ভুল করবে কারণ সে দাজ্জালের মত একচোখ দিয়ে দেখবে। সুরা কাহাফে বর্ণিত মুসা নবী ও খিজির এর ঘটনা আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে একমাত্র আল্লাহর বান্দাগণ দুচোখ দিয়ে দেখে। তারা বাহ্যিক চক্ষু এবং অন্তর চক্ষু উভয়টি দ্বারা দাজ্জালের এযুগে প্রতিটি বস্তুর ঘটনার বাস্তব অবস্থা নিরূপন করতে পারে। দাজ্জাল নিয়ন্ত্রিত এ সময় তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারে না।
বর্তমান সময়ের ইসলামি চিন্তাবিদদের অন্তর চক্ষুর উন্মেষ না ঘটায় তারা আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সম্পন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থা যে ‘শিরক’ তা বুঝতে পারেন না। তেমনি তারা আরো বুঝতে পারে না বর্তমানে প্রচলিত অদৃশ্য ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা ব্যবস্থা হারাম। তথাকথিত ইসলামী ব্যাংকের সুদী মুরাবাহা পদ্ধতিকেও তারা স্বাগত জানান।
আমরা বিশ্বাস করি যে একমাত্র কুরআন পারে বর্তমান সময়ের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে। আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়ে বলেছেন,
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِي كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا عَلَيْهِم مِّنْ أَنفُسِهِمْ ۖ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيدًا عَلَىٰ هَـٰؤُلَاءِ ۚ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ
সেই দিন আমি উত্থিত করিব প্রত্যেক সম্প্রদায়ে তাহাদেরই মধ্য হইতে তাহাদের বিষয়ে এক একজন সাক্ষী এবং তোমাকে আমি আনিব সাক্ষীরূপে ইহাদের বিষয়ে। আমি আত্মসমর্পণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করিলাম।
(সূরা নাহল ১৬: ৮৯)
আমরা আরো বিশ্বাস করি যে, সূরা কাহাফ হল সেই সূরা যা বর্তমান সময়ের দাজ্জাল সৃষ্ট রহস্য উন্মোচন করে আল্লাহর বান্দাদের দিতে পারে সঠিক পথের দিশা। মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে রক্ষা করা হবে”
(মুসনাদে আহমদ, ১৯৬)
অপর বর্ণনায় রয়েছে, “যে ব্যক্তি জুমআর দিনে সুরা কাহাফ তেলওয়াত করবে তার জন্য দুই জুমআর মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে থাকে”।
(মুসতাদারাকে হাকিম ২/৩৬৮)
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, অন্তর চক্ষুর নূর ই পারে এই প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির আধুনিক দাজ্জাল নির্মিত সভ্যতার রহস্যদ্বার উন্মোচন করতে। সুরা কাহাফ শেষ হয়েছে জুলকারনাইনের ঘটনা দ্বারা যার কাছে আল্লাহ একত্রিত করেছিল ঈমান এবং শক্তি, তার তৈরী বিশ্ব ব্যবস্থায় দুষ্টের দমন করা হয় এবং ঈমানদার ব্যক্তির পালন করা হয়। তার জ্ঞানসমৃদ্ধ প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আল্লাহর সৃষ্টি সকল প্রাকৃতিক জীবনযাপন পদ্ধতিকে সংরক্ষণ করা হয়। তার উন্নয়ন প্রকৃতি বিনষ্ট কারী না হয়ে হয় প্রকৃতি অনুগমনকারী।
সূরা কাহাফ আমাদের বুঝতে শেখায় যদি এই উম্মত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রকৃত অনুসরণ করতো তবে এ পৃথিবীতে নেমে আসতো বেহশতের প্রশান্তি। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ঠিক বিপরীত। আল্লাহর রাসুলের আদর্শ প্রত্যাখান করে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি আর পরকালে দোযখের বাসিন্দা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করছে পৃথিবীর বাসিন্দারা।
পাঠকবৃন্দ এ সূরা অধ্যয়নের সময় আল্লাহর নিকট প্রার্থনায় দুহাত তুলে বলেছেন, আল্লাহ! আমাদের তোমার ইলমের নূর দান করো, যা আমাদেরকে বর্তমান সময়ের প্রকৃত বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে।
আমিন!!