লেখক : তারেক বিন হাম্জা
প্রকাশনী : বইপল্লি
বিষয় : ইবাদত, আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
পৃষ্ঠা : 64, কভার : পেপার ব্যাক, সংস্করণ : 1st Published 2019
আল্লাহ তাআলা সবার আগে তৈরি করেছিলেন একটি মাত্র মানুষ এবং সেই মানষুটি থেকে তৈরি করেছিলেন তার সঙ্গীনিকে। তারপর কত শতাব্দির পর শতাব্দী চলে গেছে। সেই আদি মানুষের বংশধররা ছেয়ে ফেলেছে সারা দুনিয়ার বুক। দুনিয়াতে আজ যত মানুষ রয়েছে সবই আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি একজোড়া মানুষের সন্তান। পবিত্র কুরআনের ভাষায় দুনিয়ার এ প্রথম মানুষকে বলা হয় আদম। আদম থেকে আদমী শব্দের উৎপত্তি এ শব্দটি হচ্ছে ইনসান বা মানুষের সমার্থক আদমের সঙ্গীর নাম হাওয়া।
মানুষের দেহটা আসল সত্ত্বা নয়। মায়ের পেটে মানুষের শরীরটা তৈরি হওয়ার অনেক আগে আসল মানুষটি তৈরি করা হয়। পবিত্র কুরআনের মতে পহেলা মানুষ আদমের দেহ তৈরি হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা এর মধ্যে তার রুহ থেকে ফুঁক দিলেন। আল্লাহ যে জিনিসটাতে ফুঁক দিলেন সেটাই আসল মানুষ। পবিত্র কুরআনে আরও বলা হয়েছে, আদমের পিঠ থেকে সকল রুহকে এক সাথে তৈরি করা হয়েছে। কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ পৃথিবীতে পাঠানো হবে সবাইকে এক সাথেই সৃষ্টি করা হয়েছে। দুনিয়ায় কাউকে আগে কাউকে পরে পাঠানো হয়। আল্লাহ বলেন,
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি একজন মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি শুকনো ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে। অতএব যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেবো এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও। (সূরা হিজর : ২৮-২৯)
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী আদমের দেহ সৃষ্টির দু’হাজার বছর আগে আল্লাহ তাআলা রূহ সৃষ্টি করেন। তারপর আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আ.) এর দেহ কাঠামো নিজ কুদরতি হাতে তৈরি করেন। এ দেহ কাঠামো বানানো শেষ হলে চল্লিশ বছর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাঁকে নিস্প্রাণ অবস্থায় ফেলে রাখেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আদমের কাঠামোর ভেতর রূহ ফুঁকে দিয়ে আদমকে মানুষ রূপে সৃষ্টি করলেন।
রূহ এবং জড়দেহ দুই জগতের দুই সত্তা। পরম করুনাময় আল্লাহর নির্দেশে দুই জগতের দুই সত্তা দুনিয়ার মত দ্বীপরাজ্যে একত্রে বসবাস করে। রূহ চলে গেলে জড়দেহের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। কারণ রূহ চলে গেলে জড়দেহকে যতই খাবার দাবার দেয়া হোক না কেন সেটি আর কোন কিছু গ্রহণ করে না। দুনিয়ার সকল লোভ লালসা ত্যাগ করে সেটি মহা নিদ্রায় চলে যায়। তাই দেহ এবং আত্মার মধ্যে আত্মাই হলো আসল সত্তা। এর ধ্বংস নেই, মৃত্যু নেই, একে ভাগ করা যায় না এবং পরিমাপ করা যায় না।
আমরা জগতের সকল কিছুর পরিচয় জানলেও নিজ দেহের আসল সত্তার পরিচয় জানি না। কল্পনায় ও তার পরিচয় তালাশ করি না। নিজকে শরীর বা দেহ থেকে ভিন্ন উপলব্ধি করাই আত্নজ্ঞান বা আত্মপরিচয়ের প্রথম সোপান। ‘আমি এই দেহ নই, কিন্তু আত্মা’-এটা শুধু মুখে বললেই হবে না যে আমি দেহ নই। প্রকৃত উপলব্ধি করতে হবে। যিনি মৃত্যুকে অতিক্রম করে জান্নাত লাভের অভিলাষী, তাঁর কাছে এই উপলব্ধি অপরিহার্য। এই উপলব্ধি করাটা প্রথমে যতটা সরল মনে হয় প্রকৃত পক্ষে ততটা সরল নয়। বইটি রচণার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে বোঝানো যে তাদের প্রকৃত পরিচয় এই শরীর নয়। এই শরীর হচ্ছে তাদের একটি আবরণ (পরণের শার্ট অথবা কোটের মতো)। এই দেহের মধ্যে আত্মা বাস করছে। মানুষ তার গুল্মলতার মতো দেহ ও পাশবিক নাফ্স এর দিক থেকে নগণ্য এক ক্ষুদ্রাংশ। দরিদ্র এক মাখলুক, দুর্বল এক প্রাণী। কিন্তু এই ক্ষুদ্রাকায় ও সংকীর্ণ-সীমাবদ্ধ বয়সের মানুষই তার প্রাণ, আত্মা এবং অন্তর্নিহিত সত্তার দিক দিয়ে এক বিরাট বিশাল অসীম ও মহান সত্তা। শুধু আত্মিক উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমেই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব বা আশরাফুল মাখলুকাত হতে পারে।