কুরআন কারীমের পরে রাসূলুলাহ (সাঃ)-এর হাদীস ইসলামী জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস ও ইসলামী জীবন ব্যবস্থার দ্বিতীয় ভিত্তি। মুমিনের জীবন আবর্তিত হয় রাসূলুলাহ (সাঃ)-এর হাদীসকে কেন্দ্র করে। হাদীস ছাড়া কুরাআন বুঝা ও বাস্তাবায়ন করাও সম্ভব নয়। হাদীসের প্রতি এই স্বভাবজাত ভালবাসা ও নির্ভরতার সুযোগে অনেক জালিয়াত বিভিন প্রকারের বানোয়াট কথা ‘হাদীস’ নামে সমাজে প্রচার করেছে। সকল যুগে আলিমগণ এসকল জাল ও বানোয়াট কথা নিরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করে মুসলমানদেরকে সচেতন করেছেন।
আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে হাদীসের পঠন, পাঠন ও চর্চা থাকলেও সহীহ, যয়ীফ ও বানোয়াট হাদীসের বাছাইয়ের বিষয়ে বিশেষ অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। যুগ যুগ ধরে অগণিত বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কথা হাদীস নামে আমাদের সমাজে প্রচারিত হয়েছে ও হচ্ছে। এতে আমরা রাসূলুলাহ (সাঃ)-এর নামে মিথ্যা বলার কঠিন পাপের মধ্যে নিপতিত হচ্ছি। এছাড়াও দুইভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। প্রথমত, এ সকল বানোয়াট হাদীস আমাদেরকে সহীহ হাদীসের শিক্ষা, চর্চা ও আমল থেকে বিরত রাখছে। দ্বিতীয়ত, এগুলির উপর আমল করে আমরা আলাহর কাছে পুরস্কারের বদলে শাস্তি পাওনা করে নিচ্ছি।
এই পুস্তকের প্রথম পর্বে হাদীসের পরিচয়, হাদীসের নামে মিথ্যার বিধান, ইতিহাস, হাদীসের নির্ভুলতা নির্ণয়ে সাহাবীগণ ও পরবর্তী মুহাদ্দিসগণের নিরীক্ষা পদ্ধতি, নিরীক্ষার ফলাফল, মিথ্যার প্রকারভেদ, মিথ্যাবাদী রাবীগণের শ্রেণীভাগ, জাল হাদীস নির্ধারণের পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি এই আলোচনা পাঠকের মনের দ্বিধা ও অস্পষ্টতা দূর করবে এবং হাদীসের নির্ভুলতা রক্ষায় মুসলিম উম্মাহর অলৌকিক বৈশিষ্ট্য পাঠকের কাছে স্পষ্ট হবে।
দ্বিতীয় পর্বে আমাদের সমাজে প্রচলিত বিভিনড়ব ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও জাল হাদীসের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, জাল হাদীসের বিষয়ে লেখকের মূলত নিজের কোনো মতামত উলেখ করা হয়নি। দ্বিতীয় হিজরীর তাবেয়ী ও তাবে- তাবেয়ী ইমামগণ থেকে শুরু করে পরবর্তী যুগের অগণিত মুহাদ্দিস রাসূলুলাহ (সাঃ)-এর নামে প্রচারিত সকল হাদীস সংকলন করে, গভীর নিরীক্ষা ও যাচাইয়ের মাধ্যমে সে সকল হাদীস ও রাবীদের বিষয়ে যে সকল মতামত প্রদান করেছেন লেখক মূলত সেগুলির উপরেই নির্ভর করেছেন এবং তাঁদের মতামতই উল্লেখ্য করা হয়েছে।