বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের অবদান এই দুই রাষ্ট্রের সম্পর্ককে দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে। দীর্ঘ ৪০ বছরে বাংলাদেশ—ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়নি। কিন্তু ২০০৮ সালে বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এর নেতৃত্বে নতুন একটি সরকার গঠিত হওয়ায় এই দুই রাষ্ট্রের সম্পর্ক যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতকে এখন যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ—ভারত সম্পর্কে বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে, যা দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্ককে নানা প্রশ্নের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
যে সব সমস্যা দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্ককে নতুন করে চিন্তার খোড়াক যুগিয়েছে তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে কানেকটিভিটি, অর্থাৎ বাংলাদেশ—ভারত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভারত দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগে গুরুত্ব দিচ্ছে, কিন্তু আঞ্চলিক ও আন্ত:আঞ্চলিক যোগাযোগের যে প্রস্তাবনাগুলো (সার্ক, বিমসটেক, বিসিআইএম, এশিয়ান হাইওয়ে কতৃর্ক প্রস্তাবিত রুট) রয়েছে সেগুলোতে রুট নির্ধারণে বিরোধ থাকায় বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। স্বাধীনতার পঁচিশ বছর পর (১৯৯৬) একটি চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে গঙ্গা নদীর পানি বন্টন সমস্যার সমাধান হলেও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না, এ ধরণের সংবাদ পত্র—পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। তিস্তা নদীতে পানি বন্টন সমস্যা দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ভারতের টিপাই মুখ বাধ ও আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাংলাদেশের নদীর পানি প্রবাহে মারাত্নক প্রভাব বিস্তার করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের সাথে ব্যবধান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিনিয়োগ ও উল্লেখযোগ্য নয়। শুল্ক ও অশুল্ক বাঁধাগুলো বাণিজ্য প্রসার ব্যাহত করছে। স্বাধীনতার পর পরই সীমান্তের সমস্যাগুলোর সমাধানে সীমান্ত চুক্তির উদ্যোগ নিলেও চুক্তি বাস্তবায়ন হয় ২০১৫ সালে। সমুদ্র সীমা নিয়ে ভারতের সাথে বহুদিন পূর্বের বিরোধ (জুলাই’২০১৪) সমাধান হয়ে যাওয়ায় সমুদ্র সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারের সম্ভাবনা বেড়েছে। যেহেতু ভারত এসব সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতার পরিবর্তে দ্বিপাক্ষিকতাকে গুরুত্ব প্রদান করে, সেহেতু উপরোক্ত বিষয়গুলোতে জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রন্থটিতে উপরোক্ত সমস্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও সমাধানের উপায় অনুসন্ধান করা হয়েছে।